• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৩০-৪-২০২৩, সময়ঃ বিকাল ০৪:০১
  • ৮৩ বার দেখা হয়েছে

ধানকাটা অবস্থায় আকাশে মেঘ দেখলে কেঁপে ওঠে কৃষকদের বুক

ধানকাটা অবস্থায় আকাশে মেঘ দেখলে কেঁপে ওঠে কৃষকদের বুক

নিজস্ব প্রতিবেদক ►

প্রান্তিক কৃষক জহির, মন্টু, খলিল ও আজাহার। এছাড়া আরও অনেকে। সবাই গাইবান্ধার বাসিন্দা। চলতি মৌসুমে আবাদ করেছেন বোরো ধান। বাড়তি খরচ, খড়া আর নানা রোগবালাই কাটিয়ে ইতোমধ্যে ক্ষেতের ধান পাকতে শুরু করেছে। কেউ কেউ কাটা-মাড়াইও করেছেন।

এরই মধ্যে দেখা দিয়ে শ্রমিক সংকট। সেই সাথে আকাশের বিরূপ আচারণ। ক্ষেতের এই পাকা ধান ঘরে তুলতে চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। মেঘ দেখলেই কেপে ওঠে বুক, এমনটা জানালেন এই কৃষকরা। 

সরেজমিনে রোববার গাইবান্ধার নিভৃত অঞ্চলে দেখা গেছে, কৃষকের মাঠে দুলছে পাকা ধান। লক্ষাধিক হেক্টর ধান কাটার উপযুক্ত সময় হলেও পর্যাপ্ত কৃষি শ্রমিক না থাকায় জমির ধান ঘরে ওঠানো নিয়ে আতঙ্কে আছেন কৃষকরা। হঠাৎ শিলাবৃষ্টি কিংবা কালবৈশাখী ঝড় হলে ধানের যে পরিমান ক্ষতি হবে তা বলা বাহুল্য। 

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ২৮ হাজার ২০৫ হেক্টর ধান আবাদ হয়েছে। এ পর্যন্ত ২০ ভাগ ধান ঘরে তুলেছে কৃষকরা। সবগুলো ধান কাটা-মাড়াই হলে এ থেকে প্রায় ১০ লক্ষাধিক মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। 

জানা যায়, একসময় গাইবান্ধা অঞ্চলে বোরো ধান কম আবাদ করা হয়েছিল। সেই সময়ে শ্রমিকের কোন সংকট ছিলো না। কিন্তু বর্তমানে স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তিতে প্রত্যেক বছরের ধানের আবাদ বাড়ছে। একই সঙ্গে নিম্ন আয়ের মানুষদের পেশা বদলের কারণে শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। এই শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় সমলয় পদ্ধিতি ধানের আবাদ ও কাটা-মাড়াইয়ের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে বিতরণ করা হচ্ছে কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিন।

যা দিয়ে কৃষকের স্বল্প সময় ও খরচে দ্রুত ধান কাটা-মাড়াই করা সম্ভব। কিন্তু এসব মেশিন চাহিদার তুলনা অপ্রতুল হওয়ায় কৃষকের কোন কাজে আসছে না। অন্যান্য বছরের ন্যায় চলতি মৌসুমে একযোগে ধান কাটার উপযোগি হয়ে এসেছে। দিগন্ত মাঠে দুলছে সোনালী শীষ। ব্লাস্ট রোগ, খড়া আর বাড়তি খরচ সামাল দিয়ে এখন এসব ধান ঘরে তোলা নিয়ে চরম হিমসিম খাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক। 

সম্প্রতি জেলার আশপাশ এলাকা দিয়ে বয়ে যাচ্ছে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি। এর প্রভাব পড়তে পারে গাইবান্ধা অঞ্চলেও। কখনো কখনো মেঘে ঢাকছে পুরো আকাশ। এই মুহূর্তে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে কৃষকের পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না বলে জানান কৃষকরা।    

শ্রমিক আনজারুল ইসলাম বলেন, এক সময়ে শ্রমিকের অভাব ছিলনা। গ্রামের অর্ধেক বাসিন্দা ধান কাটা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু সেইসব শ্রমিকরা অন্য পেশায় স্বাবলম্বির কারণে তারা আর ধান কাটার কাজ করেন না। বর্তমানে এক বিঘা ধান কাটা-মাড়াই ৪ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে।  

পলাশবাড়ীর কৃষক নুর আলম মন্ডল বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছেন। এর মধ্যে ব্রি ধান-২৮ জাতে ব্লাস্ট রোগে ২০ শতক জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। অবশিষ্ট হাইব্রিড জাতের ধান ক্ষেতে পেকেছে। শ্রমিকের অভাবে এসব ধান কাটা-মাড়াই করতে সময় লাগছে। অধিক মূল্য দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। 

সাদুল্লাপুরের কৃষক কৃষক জহির উদ্দিন জানান, গত বোরোতে ১ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করছিলেন। এতে তার সর্বমোট খরচ হয়েছিল ৮২ হাজার ৫০০ টাকা। এ বছর তা হেক্টর প্রতি ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হতে পারে। ফলে চলতি মৌসুমে বোরো ধান আবাদের বাড়তি খরচ নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। গত বছরে বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্র মালিককে হেক্টর প্রতি ভাড়া দিয়েছিলেন ১২ হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু এ বছর বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেটি মেশিন মালিক ১৭ হাজার ৩০০ টাকা নিয়েছে। ধার-দেনা করে এই আবাদ করেছি। ক্ষেতের সবগুলো ধান পেকেছে। শ্রমিকের অভাবে এখনো কাটতে পারিনি। 

গোবিন্দগঞ্জের কৃষক আজাহার আলী বলেন, আকাশের গর্জন শুনলেই ভয়ে বুকটা কেপে ওঠে। এই বুঝি শিলাবৃষ্টি শুরু হবে। জমিতে পাকা ধান অথচ কৃষি শ্রমিক সংস্কটের কারনে ধান কাটতে পারছি না। সরকারের সেই হারভেস্টর মেশিন খুঁজেও পাওয়া যায় না। 

গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমরা কৃষকের পাশে আছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কৃষকের ধান কাটা-মাড়াই করে দিচ্ছি। 

গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালকক খোরশেদ আলম জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ধান ফসল রক্ষায় কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে যেসব কৃষকের ৮০ ভাগ ধান পেকেছে সেইসব কৃষকদের ধান কাটার জন্য বলা হচ্ছে। সেই শ্রমিক সংকট থাকলে কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিনে কাজ করতে পারবেন।   

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়